ইংল্যান্ডের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের ঐতিহ্যগত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েও সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, এবং সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত হয়েছে। আধুনিক ইংলিশ শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করে, যা তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সফল হতে সহায়ক। এতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, এবং উচ্চ শিক্ষা স্তরগুলোর পাশাপাশি বৃত্তিমূলক ও পেশামূলক শিক্ষার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
আধুনিক ইংল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:
১. বাধ্যতামূলক শিক্ষা:
ইংল্যান্ডে ৫ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা চালু রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ১১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা এবং ১১ থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করে। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এ-লেভেল, এপ্লাইড জেনারেল ডিপ্লোমা, বা টেকনিক্যাল কোর্স করতে পারে।
২. কারিগরি ও পেশামূলক শিক্ষা:
ইংল্যান্ডের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা কর্মমুখী শিক্ষার উপরও গুরুত্ব দেয়। বৃত্তিমূলক বা পেশামূলক শিক্ষার জন্য Further Education (FE) কলেজগুলোতে নানা কারিগরি কোর্স চালু রয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিশেষ পেশাদারী দক্ষতা অর্জন করতে পারে যা চাকরি বা উচ্চশিক্ষায় সহায়ক।
৩. ফ্রি স্কুল এবং একাডেমি:
সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডে ফ্রি স্কুল এবং একাডেমি নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্বায়ত্তশাসিত এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে পরিচালিত হলেও সরকার তাদের অর্থায়ন করে। এতে শিক্ষার্থীরা কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের শিক্ষা লাভ করতে পারে।
৪. প্রযুক্তির ব্যবহার:
প্রযুক্তি ইংল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম, অনলাইন লার্নিং রিসোর্স, এবং ই-লার্নিং টুলসের ব্যবহার শিক্ষার্থীদেরকে শিখন প্রক্রিয়ায় আরও উদ্ভাবনী এবং কার্যকর করতে সহায়তা করে। COVID-19 পরবর্তী সময়ে অনলাইন ক্লাস এবং হাইব্রিড লার্নিং আরও জনপ্রিয় হয়েছে।
Read More – হাইব্রিড লার্নিং কি?
৫. ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষাব্যবস্থা:
প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা সাপোর্ট প্ল্যান ও বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীর বিশেষ চাহিদা বা সক্ষমতার ভিত্তিতে ইনক্লুসিভ এডুকেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যাতে তারা তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
৬. গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ:
ইংল্যান্ডে শিক্ষার গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের জন্য Ofsted (Office for Standards in Education, Children’s Services and Skills) প্রতিষ্ঠানটি স্কুল ও কলেজগুলো পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করে। এভাবে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
৭. সৃজনশীলতা ও গবেষণার ওপর গুরুত্ব:
ইংল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা সৃজনশীল চিন্তা ও উদ্ভাবনমূলক গবেষণাকে উৎসাহিত করে। বিশেষত উচ্চশিক্ষা স্তরে, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রমে বড় পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়, যা ইংল্যান্ডকে বৈশ্বিক শিক্ষা মানচিত্রে শীর্ষস্থানীয় করেছে।
৮. বিশেষ শিক্ষা প্রয়োজন (SEN):
ইংল্যান্ডে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য Special Education Needs (SEN) ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে বিশেষায়িত শিক্ষক এবং সংস্থান ব্যবহার করে তাদের আলাদা শিক্ষার সুযোগ প্রদান করা হয়।
ইংল্যান্ডের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদেরকে শুধু একাডেমিক শিক্ষায় নয়, বরং জীবনের সব ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা, যাতে তারা নিজেদের সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে কার্যকরভাবে অবদান রাখতে পারে।